সম্প্রতি বাংলাদেশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাদি জমির পরিমাণ কমে দিন দিন কমে আসছে, ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষিত ও অর্ধ-শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা তাদের বাড়ির ছাদে কিংবা উঠানের মত স্বল্প জায়গায় একই সাথে মাছ এবং সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের অক্লান্ত চেষ্টায় সফল হয়েছে এই পদ্ধতিটি। ফলে এই সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে শহরের যেকোনো বাড়ির ছাদে সবজি, ফল এবং মাছ চাষ করা যাবে। উৎপাদন করা যায় তিনগুণ।
একোয়াপনিক্স এমন একটি প্রযুক্তি যা হাইড্রোপনিক্স ও একোয়াকালচারের সমন্বয়ে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ। এতে মাটির প্রয়োজন হয় না। অল্প জায়গায়, বিশেষ করে বাড়ির ছাদে, উঠান ও যেকোনো পরিসরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচুর শাক-সবজি ও মাছ উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিটি উপকূলবর্তী লবনাক্ত অঞ্চলের জন্য বেশ উপযোগী কারণ এই পদ্ধতিতে ৯৭ শতাংশ কম পানি প্রয়োজন পড়ে। ব্যবহার করা মাছ চাষের ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙ্গে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রেটে পরিণত করে, এর ফলে গাছের জন্য আলাদা করে কোনো খাবারের প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে গাছ মাছের ট্যাঙ্কের পানিকে দূষণ মুক্ত করে তা ব্যবহারের উপযোগী গড়ে তোলে, ফলে মাছের উৎপাদন বেড়ে যায়। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে কোনো প্রকার কীটনাশক ও সারের প্রয়োজন হয় না তাই অল্প খরচে অনেক লাভবান হতে পারবে কৃষকরা।
ড. সালাম জানান তিনি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ির ছাদে এই পদ্ধতির জন্য এক টনের একটি প্লাস্টিকের ট্যাংকে ৮০০ লিটার পানিতে ৬০টি তেলাপিয়া মাছ ছাড়েন। পাশাপাশি সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার একটি কাঠের আলনায় তিন সারিতে ৩৬টি প্লাস্টিকের পানির বোতল যুক্ত করেন। বোতলগুলোর নীচের কাছাকাছি দুই পাশে কেটে জানালার মতো রাখা হয়। বোতলগুলোকে উল্টে এর ভিতরে একটু স্পঞ্জ দিয়ে তার ওপর নুড়ি পাথর স্থাপন করে প্রতিটি বোতলে দুটি করে গাছ লাগান। এতে একটি আলনায় ৩৬টি বোতলে ৭২টি গাছ রোপন করা যায়।
এবার মাছের ট্যাংকের পানি সাত ফুট উঁচুতে একটি ৩০ লিটারের বালতিতে তুলে তা থেকে সাইফোন প্রক্রিয়ায় ফোঁটা ফোঁটা করে উপরের ১২টি বোতলে পানি দেওয়া হয়। এ পানি ধীরে ধীরে উপর থেকে নিচে আরো দুটি বোতলের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে একটি পাত্রে এসে জমা হয় যা পুনরায় মাছের ট্যাংকে ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা পানিপ্রবাহের প্রয়োজন হয়। তবে মাছকে নিয়মিত খাদ্য প্রদান করতে হয়। মাছকে যাতে বাজার থেকে ক্রয় করা খাদ্য দিতে না হয়, সে জন্য কালো সৈনিক (Black Soldier Fly) পোকার লার্ভার উৎপাদন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন ড. সালাম, যা মাছের পছন্দের খাবার। এ পোকার ডিম ও লার্ভা লালন-পালনের জন্য একটি বিশেষ চেম্বার তৈরি করে তার মাঝখানে রান্নাঘরের তরিতরকারির খোসা ও পচা গম রেখে এই পোকাকে ডিম দেওয়ার জন্য আকৃষ্ট করা হয়। ফলে দলে দলে এই পোকা এসে এ চেম্বারে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বের হওয়া লার্ভাগুলো পচা বর্জ্য খেয়ে বড় হয় এবং লার্ভার শেষ স্তরে চেম্বার থেকে বের হয়ে কোকন অবস্থায় কিছুদিন থাকার পর পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। সহজ এ পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রাম-বাংলার অনেক শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা খুব সহজেই নিজের কর্মসংস্থান করতে পারবেন বলে জানান ড. সালাম। তা ছাড়া এ পদ্ধতিতে খুব কম খরচে বাড়ির আঙিনায় মাছ ও শাকসবজির চাষ করে পারিবারের আমিষের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। তা ছাড়া এ পদ্ধতিতে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না বলে এটি মানুষে জন্য সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি।