কিভাবে কমলা চাষ করবেন: কমলা চাষ পদ্ধতি

0
17955
কমলা চাষ পদ্ধতি

কমলা চাষ করে সফলতা পেতে পারেন আপনিও। কমলা এক প্রকারের লেবু জাতীয় রসালো ফল। এটি সরাসরি খাওয়া হয় এবং ফ্রুট সালাদে ব্যবহৃত হয়। কমলা একটি জনপ্রিয় ফল। কমলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Citrus reticulate ইংরেজি নাম Mandarin orangeMandarin এবং Mandarine। এটি Rutaceae পরিবার এবং Citrus গোত্রের ভুক্ত।

কমলা চাষ উপযোগী মাটি:

উঁচু, উর্বর, গভীর সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটি কমলা লেবু চাষ করার জন্য উপযোগী।

আবহাওয়া:

যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয় এমন আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে কমলার চাষ ভালো হয়। প্রখর সূর্যকিরণ ও উচ্চ তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বছরে দেড়শ থেকে আড়াইশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা এবং আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান এর জন্য উপযোগী।

মাটির পি.এইচ মান:

কমলা চাষের জন্য মাটির মাটির পি.এইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.০।

 জাত:

পৃথিবীতে অনেক ধরনের কমলার জাত আছে। তবে আমাদের দেশে চাষযোগ্য উন্নত কমলা লেবুর জাতগুলো হল:  খাসিয়া ও বারি-১

বর্তমানে বারি-১ কমলা লেবু এটি আমাদের দেশে অনেক বেশী করে চাষ করা হচ্ছে। কারণ এ কমলা লেবু বারমাসি জাত।

বারি কমলা-১ পরিচিতি:

আগাম ফল প্রদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। পাকার পর এ ফল হলুদ রঙ ধারণ করে। ফলের খোসা ঢিলা, ফল রসালো ও মিষ্টি। প্রতিটি গাছে ৩০০-৪০০টি ফল ধরে। ফল দেখতে বড়, ওজন ১৮০-২০০ গ্রাম ও দেখতে প্রায় গোলাকার।

কমলা চাষ

কমলা চাষ উপযোগী অঞ্চল:

আমাদের দেশে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় জেলা এ ফল চাষ উপযোগী। আমাদের দেশে কমলা লেবু চাষের যতেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

বংশবিস্তার:

বীজ থেকে জাইগোটিক চারা দুর্বল এক্ষেত্রে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না এবং ফল ধরতে প্রায় ৪-৫ বছর লাগে। চারাগুলো সবল ও মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে এবং ভাইরাস মুক্ত হয়। গাছে ফল ধরতে ৪-৫ বছর লাগে।

অঙ্গজ:

ভিনিয়ার/ক্লেফট গ্রাফটিং এবং টি-বাডিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চারা থেকে ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল আসে। এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।

চারা রোপনের উপযুক্ত সময়:

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আপনি বছরের যে কোন সময়েই কমলা লাগাতে পারেন। বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ মে-জুন মাসে চারা রোপণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, সেচের সুবিধা থাকলে যে কোনো সময় কমলা লেবুর চারা রোপণ করা যায়।

মাদা তৈরী ও রোপন পদ্ধতি:

কমলা লেবুর চারা রোপণের জন্য সমতল জমিতে বর্গাকার, আয়তকার এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার গর্তের আকার ৬০×৬০×৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারা ৪ মিটার × ৪ মিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা:

মাদা প্রতি সার সুপারিশমালা:

গোবর  ১০ কেজি

ইউরিয়া ২০০ গ্রাম

টিএসপি ২০০ গ্রাম

এমওপি ২০০ গ্রাম এবং

চুন    ৫০০ গ্রাম চুন দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনা:

খরা মৌসুমে বয়স্ক গাছে ২ থেকে ৩টি সেচ দিতে হবে। গাছে ফল পরিপক্ব হওয়ার সময় সেচ দিলে ফল আকারে বড় ও রসযুক্ত হয়।

সতকর্তা:

গাছের গোড়ায় পানি জমলে মাটিবাহিত রোগ হতে পারে। তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা করতে হবে।

পরিচর্যা:

আগাছা যে কোন ফসল উৎপাদনে একটি বিরাট অন্তরায় তাই আগাছা পরিস্কার রাখতে হবে। কমলার চারা রোপন করা হলে এর চার পাশের মাটিকে উচু করে দিতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি না জমে। চারা লাগানো শেষ হলে গাছগাছের গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। গাছ লাগানোর পর ফল ধরার আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডাল ছেঁটে গাছকে নির্দিষ্ট আকারে রাখতে হবে। ডাল ছাঁটাইয়ের পর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট দিতে হবে। এজন্য দুটি পাত্রে ৭০ গ্রাম তুঁতে ও ১৪০ গ্রাম চুন আলাদাভাবে মিশ্রণ করে এক লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হবে।

কমলা সংগ্রহ

ফল সংগ্রহ:

কমলা একটি জনপ্রিয় এক প্রকারের লেবু জাতীয় রসালো ফল। এ ফল পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলাতে শুরু করে। গাছে কমলা ভালোভাবে পাকার পর ফল সংগ্রহ করলে মিষ্টি হয়।

ফলন:

এক একটি গাছে প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরে। একটি পূর্ণ বয়স্ক কমলা গাছ থেকে বছরে গড়ে  প্রায় ৩০০-৪০০টি কমলা পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, বেশি বয়স্ক কমলা গাছ বছরে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। একটি কমলা গাছ সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।

কমলা চাষ সর্ম্পকে আরো তথ্য জানতে আমাদের সংঙ্গে থাকুন ।