আমরা খরগোশকে সাধারণত সৌখিন প্রাণী হিসেবে পালন করে থাকি। তবে, বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন করে আমরা যেমনভাবে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারি ঠিক তেমনিভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সংস্থান করতে পারি। খরগোশের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। খরগোশ তৃর্ণভোজী শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের প্রাণী । তাই এ প্রাণীকে খুব সহজেই পালন করা যায়। বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানেই গড়ে তোলা যায় খরগোশের খামার।
কেন খরগোশ পালন করব:-
১.খরগোশ তৃণভোজী প্রাণী তাই অল্প পরিমাণ এবং নিম্নমানের খাদ্যেই এদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।
২. খরগোশ অধিক উৎপাদন ও দ্রুত বর্ধনশীল একটি প্রাণী।
৩. খরগোশ বছরে ৮ থেকে ১০ বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবার ২ থেকে ৮টি বাচ্চা দেয়।
৪. খরগোশের চামড়া অধিক মুল্যবান যা পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
৫. খরগোশের মাংসে চর্বি ও কোলেস্টরলের মাত্রা কম এবং মাংস খেতে খুব সুস্বাদু।
খরগোশের জাত:
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির খরগোশ পাওয়া যায়। যেমন: ডার্ক গ্রে (দেশী), ফক্স, ডাচ, বেলজিয়াম সাদা, নিউজিল্যান্ড লাল, নিউজিল্যান্ড সাদা, নিউজিল্যান্ড কালো, এবং ছিনছিলা উল্লেখযোগ্য।
পালন পদ্ধতি:
বাড়ীর ছাদে বা বাড়ীর আঙ্গিনা অথবা বারান্দায় অল্প জায়গায় বিনিয়োগ করে ছোট আকারের শেড তৈরি করে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়।
দুই পদ্ধতিতে খরগোশ পালন করা যায় হয়ে থাকে।
১) লিটার পদ্ধতি: কম সংখ্যক খরগোশ পালনের জন্য এপদ্ধতি উপযোগী। খোরগোশ পালনের জন্য মেঝে কংক্রিটের হওয়া উচিত কেননা খোরগোশ মাটি খুঁড়ে গর্ত বানায় যা অত্যন্ত বিরক্তি কর। লিটার পদ্ধতিতে মেঝের উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে তুষ ,কাঠের ছিলকা অথবা ধানের খড় ইত্যাদি ছড়িয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে খরগোশ পালন করতে হলে এক সাথে ৩০টার বেশি খরগোশ প্রতিপালন করা ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে পুরুষ খরগোশ অবশ্য আলাদা ঘরে রাখতে হবে তা না হলে খরগোশ সহজে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া খরগোশকে সামলানোও খুব অসুবিধা হয়।
খরগোশ প্রতিপালনের জন্য আমাদের দেশে সাধারণত পরিবহনযোগ্য নেটের খাঁচা বা কাঠের বাক্স ব্যবহার করা হয় যা খামারীরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে এবং রাতে ঘরের ভিতরে আনতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কোনো এলাকাতে পুরুষ এবং স্ত্রী খরগোশকে এক সাথে রাখা হয় কিন্তু বাচ্চা দেবার পর পুনরায় বাচ্চাসহ স্ত্রী খরগোশকে আলাদা করে ফেলা হয়। শুধু প্রজননের জন্যে পুরুষ খরগোশকে ও স্ত্রী খরগোশের নিকট ১০-১৫ মিনিট ছেড়ে দেওয়া হয়।
২) খাঁচা পদ্ধতি: বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালনের জন্য খাঁচা পদ্ধতি বিশেষ জনপ্রিয়। সেক্ষেত্রে খাঁচার জন্য লোহার পাত দিয়ে তৈরি ৩-৪ তাকবিশিষ্ট খাঁচা অধিক উপযোগী। লক্ষণীয় যে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রেখে প্রতিটি তাকে খোপ তৈরি করতে হবে।
খাঁচাতে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা:
ক) একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ খরগোশের জন্য ৪ বর্গফুট।
খ) পূর্ণবয়স্ক মা খরগোশের জন্য ৬ বর্গফুট (প্রসূতি ঘর সহ)।
গ) এবং বাচ্চা খরগোশের জন্য ১.৫ বর্গফুট।
পূর্ণবয়স্ক খরগোশের খাঁচা তৈরী করার জন্য খাঁচার দৈর্ঘ্য ১.৫ ফুট, প্রস্থ ১.৫ ফুট এবং উচ্চতা ১.৫ হওয়া উচিত। এরুপ খাঁচায় বাড়ন্ত দুইটি খরগোশ প্রতিপালন করা যাবে।
বড় আকারের খরগোশের জন্য খাঁচার দৈর্ঘ্য ৩ ফুট, প্রস্থ ১.৫ ফুট এবং উচ্চতা ১.৫ ফুট বিশিষ্ট খাঁচা উপযোগী। উল্লেখ্য যে ২০ ফুট লম্বা, ১৩ ফুট প্রস্থ এবং ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাঁশের অথবা পাকা ঘরে প্রায় ১৫০-২০০টি খরগোশ খাঁচায় লালন পালন করা যায়।
খরগোশের খাবার:
খরগোশ তৃণভোজী শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের প্রাণী। কচি ঘাস, লতা-পাতা, গাজর, মুলা, শস্য দানা, মিষ্টি আলু, শশা, খড়কুটো, তরকারির ফেলনা অংশ, গম, ভুসি, কুড়া, খৈল, সয়াবিন, দুধ, পাউরুটি, ছোলা ইত্যাদি খরগোশের নিত্য দিনের খাবার। খরগোশকে ঘাস, শাক ইত্যাদি সব সময় শুকনা বা ঝকঝকে অবস্থায় দিতে হবে। ভেজানো গম বা ছোলা অল্প সিদ্ধ করে এর সাথে ভুসি মিশিয়ে দিলে আরো ভালো হয়।
উল্লেখ্য যে খরগোশের বয়স ও প্রজাতি ভেদে খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। একটি বয়স্ক খরগোশের খাদ্যে নিম্নোক্ত পুষ্টির উপাদান থাকতে হয়। যেমন:
ক্রড প্রোটিন ১৭-১৮%
আঁশ ১৪%,
খনিজ পদার্থ ৭%
ও বিপাকীয় শক্তি ২৭০০ কিলোক্যালরি/ কেজি হওয়া প্রয়োজন।
এবং বয়স্ক খরগোশের জন্য দৈনন্দিন ১৩০-১৪৫ গ্রাম, দুগ্ধবতী খরগোশের জন্য ২৫০-৩০০ গ্রাম ও বাড়ন্ত খরগোশের জন্য প্রতিদিন ৯০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
নিচে সুবিধার জন্য একটি পূর্ণবয়স্ক খরগোশের খাদ্য তালিকা ছক আকারে দেওয়া হল:
খরগোশ পালনে কিভাবে আর্থিক লাভবান হওয়া যায় এবং মাংস গ্রহণের ধর্মীয় ব্যাখ্যা জানতে সফল খামারীর সঙ্গে থাকুন।