জায়গার অভাব? তাহলে টবে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের চাষ শুরু করতে পারেন
টবে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের চাষ শুরু করার আগে ক্যাপসিকাম সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।
সৌখিন সবজি ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বের জনপ্রিয় সবজি। এমনকি বর্তমানে বাংলাদেশেরও একটি জনপ্রিয় সবজি। যার জনপ্রিয়তা দিন দিন আরো বেড়ে চলেছে। ক্যাপসিকামের আকার সাধারণত গোলাকার ও ত্বক পুরু হয় অনেকটা টমেটোর মত। তবে তিনগুন/চারগুণ বড় অবিকল কাঁচা/পাকা মরিচের মত আকারেরও পাওয়া যায়।
কেন করব ক্যাপসিকামের চাষ?
ক্যাপসিকাম একটি লাভজনক সৌখিন সবজি। এটি চাষ করলে আপনি যেমন নিজেও খেতে পারবেন, চাইলে বিক্রি করতে পারবেন। তেমনি আপনার সখের বাগানের শোভা বর্ধনও করতে পারবেন। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ এবং এর অন্যান্য গুণগুলো (ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের প্রতিরোধক, হজমে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, বাত প্রতিরোধ করে, ত্বক এবং হাড়ের জন্য ভাল, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করে, হৃদযন্ত্রের জন্য ভাল ইত্যাদি) থাকার কারণে পুষ্টিগুণের দিক থেকে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি।
এখন আপনি হয়তো ভাবছেন……..
চাষ করতে তো জায়গার প্রয়োজন, তা না থাকলে কীভাবে চাষ করব?
তাহলে বলব আবাদি জমি ছাড়াও ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারবেন, আপনার বাসার ছাদ অথবা বারান্দায়। যেখানে আলো ও বাতাস রয়েছে সেখানেই টবে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের চাষ করতে পারেন। এমনকি আপনার ফুলের বাগানের সাথে। কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আমাদের অলস সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে সফলতায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এতে আমরা দুই দিক থেকে লাভবান হব, এক- সবুজ বনানীতে নিজেকে সতেজ রাখতে পারব। দুই- অলস সময় কে কাজে লাগিয়ে নিজে খেতে পারবো বিষমুক্ত সবজি আর পাশাপাশি কিছু উপার্জনও করতে পারব। এতে আপনার মন ও দেহ উভয়ই সুস্থ্য থাকবে।
তাহলে চলুন আমরা মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিয়াম চাষ পদ্ধতি জেনে নেই:
বাংলাদেশে সাধারণত ইয়োলো ওয়ান্ডার্স, ক্যালিফোর্নিয়া ওয়ান্ডার্স ইত্যাদি জাতের ক্যাপসিয়াম পাওয়া যায়। সব মৌসুমে ক্যাপসিয়াম বা মিষ্টি মরিচ চাষ করা যায়। তবে বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। চাষের জন্য সবচাইতে উপযুক্ত মাটি হল দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি। মিষ্টি মরিচের গাছ খরা এবং গোড়ায় পানি জমা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। তাই মাটি ঝুরঝুর করে ব্যবহার করা উচিত। বীজ থেকে চারা তৈরির জন্য প্রথমে বীজগুলো ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর বীজ বপনের ট্রেতে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপন করে হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজতলায় প্রয়োজন অনুসারে ছিটিয়ে ছিটিয়ে পানি দিতে হবে। বীজ থেকে চারা গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে।
বীজ বোনার ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪টি পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হবে। টবে চাষের জন্য ৩০-৪০দিন বয়সের চারা হলে ভালো হয়। যে কোনো সাইজের টবে ক্যাপসিয়াম চাষ করা যায় তবে ছোট বা মাঝারি সাইজের টব সবচাইতে উপযুক্ত। একটি টবে একটি গাছ লাগানোই ভালো। টবে মাটির সাথে ১/৩ অংশ গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম এবং জিংক অক্সাইড ভালো করে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন। বিকেলে চারা রোপণ করুন যতে সূর্যের তাপে চারার ক্ষতি না হয়। চারা রোপণের পর ইউরিয়া ও এমওপি দু’ভাগে ২০ ও ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
যেহেতু, ক্যাপসিকাম খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না। তাই প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে। এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছ বড় হতেই ফল দেওয়া শুরু করবে। কোনো গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। টব সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগে পাতায় হলদে দাগ এবং পাতা কুঁকড়ে গেলে গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। কারণ ভাইরাসজনিত রোগের জন্য তেমন কোনো কীটনাশক পাওয়া যায় না। জাবপোকা, এফিড, থ্রিপস, লালমাকড় ও মাইট আক্রমণ বা ছত্রাকজনিত এনথ্রাকনোজ, উইল্কল্ট রোগের আক্রমণ হলে কৃষিকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ফল আসলে সাত দিন পর পর সংগ্রহ করতে পারবেন। চাইলে বীজ সংরক্ষণ করে বা চারা তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন।
শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! কোনো প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করুন, সফল খামারীর সাথে থাকুন!
লেখা: আফসানা আক্তার