রাজহাঁস পালন করে আমিষের ঘাটতি পূরণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হোন !!

0
5354
রাজহাঁস পালন করে আমিষের ঘাটতি পূরণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হোন !!

রাজহাঁস পালন করে খামারীরা বর্তমানে অনেক লাভবান হচ্ছে। কারণ রাজহাঁস খুবই কষ্টসহিষ্ণু। কম খরচে এদের লালন পালন করা যায়। এরা প্রয়োজনীয় প্রায় সকল খাবারই চারণভুমি এবং প্রাকৃতিক ঘাস থেকে গ্রহণ করতে পারে। ফলে যেখানে প্রচুর ঘাসের যোগান রয়েছে, সেখানে কোনো প্রকার খাদ্যের যোগান ছাড়াই রাজহাঁসের খামার গড়ে তোলা যায়। কারণ রাজহাঁসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এরা তৃণভোজী। অর্থাৎ ঘাস খেয়ে এরা জীবনধারন করতে পারে। রাজহাঁসকে দিয়ে ফসলী জমিতে নিড়ানীর কাজ করানো যায়। রাজহাঁস বড় পাতা খায় না। তাই ধানের জমিতে এদের ছেড়ে দিলে এরা ধান গাছ না খেয়ে শুধু আগাছা ও ঘাস খায়। এতে তাদের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জমিও আগাছামুক্ত হয়। আমেরিকায় রাজহাঁস দিয়ে ধান ক্ষেতের আগাছা দমন খুবই জনপ্রিয়। খুব বেশি পানি না হলেও রাজহাঁস জীবন ধারন ও প্রজননে সক্ষম।

বাংলাদেশে রাজহাঁস পালন এখনো সৌখিন মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে বানিজ্যিকভাবে রাজহাঁসের খামার করে আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। রাজহাঁস পরিবেশের সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। স্বল্প খরচে রাজহাঁসের বাসস্থান তৈরি করা যায় এবং যেকোনো ঘরে পালন করা যায়। আবদ্ধভাবে পালনের জন্য বড় বা তারের জাল বেশি উচু করে দিতে হয় না। একটি রাজহাঁস ২০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত বাচতে পারে। ৩ বছর বয়স হলেই রাজহাঁস প্রজননক্ষম হয়। এদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ যেহেতু রাজহাঁস পালনের উপযোগী সেই হিসেবে বাংলাদেশও হতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত  অধিক রাজহাঁস উৎপাদককারী দেশ। রাজহাঁস পালন করে বাড়তি আয়ও করা সম্ভব। নানারকম সুবিধাও আছে। যেমন রাজ হাঁসের মাংস ও ডিম দুই-ই সুস্বাদু। রাজহাঁসের পালক দিয়ে তোষক, বালিশ, তাকিয়া, কুশণ ও হেলান দেওয়ার নরম জিনিস তৈরি করা যায়। ডিম ও রাজহাঁস বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করা যাবে।

রাজহাঁস পালন

রাজহাঁসের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত ৩ জাতের রাজহাঁস দেখা যায়। তারমধ্যে টুলুজ, চীনা এবং এমডেন অন্যতম।

টুলুজ: ভারী প্রজাতির রাজহাঁস। ফরাসি দেশের রাজহাঁস। ভারী রাজহাঁসদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে বেশি ডিম দেয়। তবে সব টুলুজ রাজহাঁস ডিম দেয় না। ঠোট, পা কমলা রঙের। গলা, পেট এবং লেজ সাদা। পুরুষ রাজহাঁসের ওজন ১৪ কেজি এবং স্ত্রী রাজহাঁসের ওজন ৯ কেজি।

এমডেন: জার্মানির হ্যানোভারে এই রাজহাঁস বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ভারী জাতের রাজহাঁস। ডিমের সংখ্যা ভালো। অন্য প্রজাতির রাজহাঁস থেকে বেশ ঠান্ডা। ঠোট জ্বলজ্বলে কমলা রঙের। পায়ে ধবধবে সাদা পালকে ভরা। পুরুষ রাজহাঁসের ওজন ১৪ কেজি এবং স্ত্রী রাজহাঁসের ওজন ৯ কেজি।

চীনা: চীন দেশের রাজহাঁস। টুলুজ এবং এমডেন ছাড়া আকারে ছোট। সংখ্যায় বেশি ডিম দেয়। বছরে ৬০টির মত। ডিমে তা দিতে অভ্যস্ত। দুটি রঙের চীনা রাজহাঁস দেখা যায়। খয়েরি এবং সাদা। খয়েরি রঙা চীনা রাজহাঁসের পা কমলা, ঠোট ও পালকের রঙও খয়েরি। সাদা রঙের রাজহাঁসের ঠোট ও পা উজ্জ্বল কমলা রঙের এবং গায়ের পালক ধবধবে সাদা। উপরের ঠোটের গোড়ার চামড়া ফুলের মত গোল হয়ে থাকে। পুরুষ রাজহাঁসের ওজন ৯ কেজি এবং স্ত্রী রাজহাঁসের ওজন ৮ কেজি। পাহারাদার হিসেবে চীনা রাজহাঁসের সুখ্যাতি আছে। এছাড়া আরো কিছু প্রজাতির রাজহাঁস রয়েছে। যেমন আফ্রিকান। অনুমান করা হয় যে এরা আদতে ভারতীয়। কেউবা বলেন চীনা এবং টুলুজের মধ্যে প্রজননের ফলে এদের সৃষ্টি হয়েছিল।

রাজহাঁসের ডিম পাড়ার সময় সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্রে। চীনে রাজহাঁস ডিম দিতে শুরু করে শীতকালে। এরা সকালের দিকেই ডিম পাড়ে। প্রথম বছরের তুলনায় এরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে বেশি ডিম দেয়ে থাকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরের ডিম আকারেও বেশ বড় হয়ে থাকে। রাজ হাঁসের ডিমের ওজন ১৪৪-১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। যা সাধারণ হাঁস ও মুরগীর ডিমের তুলনায় ৩ গুণ বেশি ওজনের হয়। শঙ্কর জাতীয় রাজ হাঁস অর্থাৎ অক্সিকান রাজ হাঁস বা চীনা এবং টুলুজ বা এমডেনের যৌন সঙ্গমে তৈরি শঙ্কর রাজ হাঁস এমডেন বা টুলুজ চীনে রাজ হাঁসের চেয়ে বেশি ডিম দেবে। রাজহাঁস বছরে ২ বার ডিম দেয়। এরফলে ডিমের পরিমান খুব কম হয়ে থাকে। এই কারণে রাজহাঁস পালনকারী ডিম না খেয়ে সেটা থেকে বাচ্চা ফোটাতেই বেশি উৎসাহী হয়ে থাকেন।

রাঁজহাসের ডিম

রাজহাঁস নিজের ডিম ফুটিয়ে থাকে এবং যখন ডিমে তা দেয় তখন ডিম পড়া বন্ধ রাখে। সুবিধা থাকলে আপনি টার্কি মুরগি, বা মস্কোডি হাঁস দিয়ে রাজ হাঁসের ডিম ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে পারেন। টাটকা ডিম (খুব জোড় সাত দিনের পুরানো), পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কোনো ফাটাফুটো নেই এবং প্রতিটি ডিমের ১৪০-২০০ গ্রাম ওজন হলে সেটা তা দেওয়ার উপযুক্ত বলে গন্য করা যেতে পারে। অনেক জায়গায় মুরগি দিয়েও রাজ হাঁসের ডিম ফোটানো হয়ে থাকে। যদি মুরগি দিয়ে রাজ হাঁসের ডিম ফোটাতে হয় তবে মুরগি প্রতি ৫/৬টি ডিম এবং রাজ হাঁস দিয়ে বসালে রাজ হাঁস প্রতি ১০/১৫টি ডিম বসাতে হবে। মুরগির নীচে যদি রাজ হাঁসের ডিম বসানো হয় তবে ডিম ঘোরানোর ব্যবস্থা খামারকারীকে নিজেই করতে হবে। কারণ ডিম বড় বলে মুরগি ডিম ঘোরাতে পারে না।

মাংস উৎপাদনকারী হাঁসদের মধ্যে রাজহাঁসের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর ১০ সপ্তাহ বয়স থেকেই রাজহাঁসের ওজন ৬-৮ কেজি পর্যন্ত হয়। রাজহাঁস পালনের জন্য আমাদের দেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী। অনেকেই বানিজ্যিকভাবে রাজহাঁস চাষে এগিয়ে আসছেন এবং প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

রাঁজহাসের বাচ্চা

রাজহাঁসের বাচ্চাকে ২১-২৮ দিনের মধ্যে সর্বপ্রথম ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন দিতে হয় এবং ১ম বার ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ১৫-২১ দিনের মধ্যে ২য় বার ঐ ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন বুস্টার দিতে হবে। ২-২.৫ মাস বয়সে ডাক কলেরার ভ্যাকসিন দিতে হবে।

মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে যদি পুকুরে রাজহাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাহলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। কারণ পুকুরের উপরে রাজহাঁসের বাসস্থান হওয়ার কারণে মাছের জন্য পুকুরে বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না। রাজহাঁসের বিষ্ঠা দিয়েই মাছের খাবারের যোগান হয়ে যায় (তবে এক্ষেত্রে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়)।

রাজহাঁস শুধু শোভাবর্ধন করে না। বাড়ি ঘর পাহারা দেয়, চোর তাড়ায়। ঘাস কাটার মেশিনের বদলে রাজহাঁস পুষুন, ঘাস সমান করে খেয়ে নেবে। পোকা-মাকড় খেয়ে জায়গা-জমি ঝকঝকে, তকতকে করে রেখে দেবে।

রাজহাঁস পালন সর্ম্পকে আরো তথ্য জানতে আমাদের সংঙ্গে থাকুন।