লাভজনক নারিকেল চাষ
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য ফলমূলের উপর নির্ভর করে। এ দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি ও ফলের চাষ করা হয়। নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এটা এমন এক বৃক্ষ যার প্রতিটি অংশ জনজীবনে কোন না কোন ভাবে কাজে আসে। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, কান্ড ও শিকড় সব কিছুই বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পের কাঁচামাল, হরেক রকম মুখরোচক নানা পদের সুস্বাদু খাবার তৈরির উপকরণ, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, সুস্বাদু পানীয়, রোগীর পথ্য এতসব গুণে গুণাম্বিত ইহা পৃথিবীর অপূর্ব গাছ, তথা ‘স্বর্গীয় গাছ’ হিসাবে সবার নিকট সমাদৃত ও সুপরিচিত।
ডাব ও নারিকেল এ প্রচুর পরিমাণ চর্বি, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনস ও খনিজ লবণে ভরপুর। এতগুলো খাদ্য উপাদান একত্রে কোন ফলে প্রাপ্তি একটা বিরল দৃষ্টান্ত। তাই পানীয় ও খাদ্য হিসেবে নারিকেলের প্রচুর চাহিদা আছে। কিছু অসুখে ডাবের পানি রোগীদের অন্যতম পথ্য। এর মধ্যে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, পাতলা পায়খানা, পানিশূন্যতা পূরণে ডাবের পানির অবদান অনেক। ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানার কারণে শরীর দূর্বল হয়ে পড়লে এ সময় স্যালাইনের বিকল্প হিসাবে ডাক্তারগণ ডাবের পানি পান অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক ভিনদেশী, যারা এ দেশের মিনারেল পানি পানে সন্ধিহান হয়, সেখানে অবাধে তারা ডাবের পানি পেলে পরম তৃপ্তিতে তা পান করে। নারিকেল কেশ তেল, ভোজ্য তেল, কোকো মিল্ক, শাঁস দিয়ে তৈরী মোরব্বা, পাঁপড়ি, মোয়া, নানাভাবে তৈরী পিঠা, পায়েস, হালুয়া, কোকো মিল্ক দিয়ে নানা পদের সুস্বাদু খাবার সকলকেই আকৃষ্ট করে। এছাড়াও গৃহ নির্মাণ সরঞ্জাম, পশু খাদ্য ইত্যাদি উপকরণ নারিকেল থেকে পাওয়া যায়। নারিকেলের গাছের পাতা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এদেশে নারিকেলের যেসব জাতের প্রচলন আছে তা মূলত লম্বা জাতের ও কম উৎপাদনশীল এবং ফলন আসতে ৭ থেকে ৯ বছর সময় লাগে। পক্ষান্তরে উচ্চ ফলনশীল ওপি (খাটো) জাতের নারিকেলের ফলন আসতে সময় লাগে মাত্র ৩ থেকে ৪ বছর। তথ্য মতে, ২০০৫ সালে ‘সিয়াম গ্রীন কোকোনাট’ ও ‘সিয়াম ব্লু কোকোনাট’ নামের নতুন জাত দুটি বিশ্ব ব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্য এক তথ্যমতে, ২০১৫-২০১৬ সালে দুইধাপে খুলনার দৌলতপুর হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ভিনদেশী এনারিকেল চারা বাংলাদেশে আনা হয়। বাংলাদেশেও ওপি জাতের নারিকেল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। অল্প সময়ে ও স্বল্প জায়গায় চাষ করা যায় বলে যেকেউ এই নারিকেল চাষ করে সফল হতে পারেন। ‘সিয়াম গ্রিন কোকোনাট’ নারিকেলটির রং সবুজ এবং ‘সিয়াম ব্লু কোকোনাট’ (ভিয়েতনামী) নারিকেলটির রং হালকা হলুদ বর্ণের হয়। প্রতিটি ডাবের ভর ১ থেকে দেড় কেজি হয়। পানি হয় ২৫০ মিলি থেকে ৩০০মিলি.। প্রতিটি গাছে ১৫০ থেকে ২০০টি ডাব ধরে। তবে ‘সিয়াম ব্লু’ জাতটি ডাবের জন্য বেশি উপযোগী ও পানি অতি মিষ্টি হয়। এই নারিকেল গাছ থেকে পাড়তে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই, কারণ ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে থেকেই পাড়া যায়। বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ এর জন্য দোয়ার্ফ বা বামন হাইব্রিড নারিকেল গাছ ব্যবহার করা যেতে পারে।
জাতের নাম:- ডিজে সম্পূর্না হাইব্রিড ডোয়ার্ফ নারিকেল। এ জাতের গাছ খাটো। যথাযথ পরিচর্যা করলে আড়াই থেকে তিন বছরেই ফলন আসবে। ফলনের পরিমান আমাদের দেশী জাতের তুলনায় প্রায় তিন গুন বেশী।
উচ্চতা:- দোয়ার্ফ বা বামন হাইব্রিড নারিকেল গাছ উচ্চতা হবে দুই থেকে আড়াই ফুট।
প্রথম ফলন:- ২.৫ থেকে ৩ বৎসরে। পূর্ণমাত্রায় ফলন :- ২৫০ টি নারিকেল প্রতি বৎসর। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা করলে প্রতি বৎসর প্রায় ২৫০ টি নারিকেল / ৪০০ টি ডাব পাওয়া সম্ভব।
যেহেতু খাটো জাতের সেহেতু পশুর হাত থেকে রক্ষা করতে শক্ত করে ভেড়া দিতে হয়, তাছাড়া কঠিন কোন সেবার প্রয়োজন হয়না। তাই যে কেউ এই নারিকেল চাষ করতে পারে। এই নারিকেল চাষ অতি লাভজনক।
মো: জাহাঙ্গীর আলম (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)