আগাম টমেটো চাষে হতে পারেন লাখোপতি !!

0
7428
আগাম টমেটো চাষ

টমেটো একটি অতি উপাদেয়, সুস্বাদু ও উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফলিক এসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে ১২ মাসই টমেটো চাষ হয়ে থাকে। টমেটোর মৌসুমে টমেটোর দাম খুব কম হলেও বছরের অন্যান্য সময় টমেটোর দাম থাকে আকাশচুম্বী। সামনে শীতকাল টমেটোর ভরা মৌসুম কিন্তু তখন টমেটোর দাম থাকবে অনেক কম। তবে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে এবং বাড়তি শ্রম দিয়ে আপনিও আশাতীত লাভবান হতে পারেন। যেটা আপনাকে করতে হবে তা হল এখনই টমেটো গাছ রোপন করতে হবে। তাহলে বাজারে পর্যাপ্ত টমেটো ওঠার আগেই আপনার টমেটো বাজারজাত করবেন ফলে উচ্চ মূল্য পাবেন এবং অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। এভাবে চাষে বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়।

জাত নির্বাচন:

আগাম টমেটো চাষের জন্য জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য যে জাতগুলো সবচেয়ে ভালো সেগুলো হল:

  • বিনা টমেটো ৩
  • বিনা টমেটো ৪
  • বারি টমেটো ৪
  • বারি টমেটো ৫
  • বারি টমেটো ৬ (চৈতী)
  • কনক

আগাম টমেটো চাষ:

আগাম টমেটো চাষ করার জন্য প্রধান প্রধান জাত হচ্ছে বিনাটমেটো ৩, বিনাটমেটো ৪, বারিটমেটো ৪, বারিটমেটো ৫ এবং বারিটমেটো ৬ (চৈতী)। পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাত চাষ করা হয়। একটি ছাউনি ২০ মিটার ´২.৩ মিটার আকৃতির হলে ভালো। ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া ২টি বীজতলায় লম্বালম্বিভাবে ১টি করে ছাউনির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছাউনির খুঁটির উভয় পাশের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার এবং মাঝখানের খুঁটির উচ্চতা ২১০ সেন্টিমিটার হতে হবে। জমি নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হয়। ২টি ছাউনির মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার চওড়া নিকাশ নালা রাখলে ভালো হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বীজতলা রাখতে হবে।

বীজতলা:

জমি থেকে বীজতলার উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার রাখা দরকার।
২টি বীজতলার মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ৪টি সারি রাখতে হবে।

চারা রোপণ:

২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারিতে রোপণ করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার রাখলে ভালো হবে।

আগাম ফসল:

গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জন্য টমাটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। হ্যান্ড স্প্রেয়ারের সাহায্যে ৫ চা চামচ (প্রতি লিটার পানিতে) টমাটোটোন শুধু ফুটন্ত ফুলে ৮ থেকে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হয়। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সারা বছর টমেটো চাষ করা সম্ভব। টমাটোটোন দ্বারা উৎপাদিত ফলে বীজ হয় না।

পোকা দমন:

শোষক পোকা এবং জাবপোকা গাছের রস শোষণ করে। শোষক পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন, সেভিন কিংবা নেক্সিয়ন এবং জাবপোকা দমনের জন্য এফিডান ডাস্টিং (৫%) কিংবা সেফস, নেক্সিয়ন ও ডাইব্রম ব্যবহার করতে হয়।

রোগ দমন:

টমেটোর ৩টি রোগ গুরুত্বপূর্ণ। ঢলে পড়া রোগ, টমেটো মোজাইক ভাইরাস এবং ফিউজেরিয়াম উইল্ট। ঢলে পড়া রোগে গাছে ফুল আসার আগেই ঢলে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করা, আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী ৪-৫ বছর টমেটো, আলু, মরিচ ও বেগুন চাষ না করা এবং প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা। মোজাইক রোগে পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছ ও ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়। সুস্থ গাছে কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা দ্বারা ভাইরাস বহনকারী পোকার আগমন প্রতিরোধ করতে হয়। ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগে গাছ ঢলে পড়ে। পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতা ভেতরের দিকে বেঁকে আসে। এ রোগ মাটির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়।

শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

রোপণের ২-৩ মাস পর থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। রঙিন নয় এরূপ টমেটো ১০ থেকে ১৫.৫০ সে. তাপে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। পাকা টমেটো ৫০০ সে. তাপে ১০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।

সীতাকুণ্ডের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে মধ্য অগ্রায়নে যখন চারদিকে আমন ধান কাটার ধুম তখন অন্যদিকে উঁচু জমিতে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। এই সবুজের বুক চিরে মাঝে মাঝে দেখা যায় হলুদ বর্ণের ফসল, কনকজাতের টমেটো। সোনালী রঙের এই ফসল ভাগ্য গড়ে দিয়েছে শত শত কৃষকের। সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকায় এই চিত্র দেখা যায়। সমতল এলাকার পাশাপাশি পাহাড়েও। সীতাকুণ্ড উপজেলার পশ্চিম  সৈয়দপুর, মহানগর, বহরপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাশবাড়ীয়া, কুমিরা সীতাকুণ্ড সদর এলাকায় উচ্চ ফলনশীল ’কনক’ জাতের টমেটোর চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষকরা। এসব এলাকায় টমেটোর চাষ করে শতশত কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে ২/১ জন কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর চাষ স্বল্প পরিসরে শুরু করে লাভবান হওয়ায় তাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন শত শত কৃষক টমেটোর চাষ করছেন। বর্তমানে টমেটো চাষ এসব এলাকার প্রধান ফসল হিসেবে স্থান পেয়েছে গ্রীষ্ম কালীন ও শীত মৌসুমে।

উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ভুলাইপাড়া গ্রামের মহরম আলী জানান, তিনি এ বছর ১৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। তার সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭০ হাজার টাকা। ১৫০ শতক জমি থেকে টমেটো বিক্রয় করে আসবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। তিনি ইতোমধ্যেই টমেটো ফলন শুরু করেছে বিক্রিও করেছে। তিনি অগ্রহায়ণের শুরুতে ৯০ থেকে ১শ’ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি শুরু করেন। তিনি ওই জমিতে ’কনক’ জাতের টমোটো চাষ করে এ সফলতা পেয়েছেন।

ওই এলাকার সহস্রাধিক কৃষকের মধ্যে মহরম আলী একজন সফল সবজি চাষী। মহরম ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে বীজতলায় টমেটোর চারা উৎপাদন করে ভাদ্র মাসে জমিতে চারা রোপন করা হয়। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে টমেটোর গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে এবং অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে টমেটো বাজারজাত করা শুরু হয়। ফলন ভেদে প্রতি ২০ শতক জমির টমেটো বিক্রি হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। সীতাকুণ্ড অঞ্চলে শতাধিক কৃষক মূলত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টমেটোর চাষাবাদ করে থাকে। প্রথমে যেসব কৃষক ক্ষুদ্র পরিসরে টমেটোর চাষ করতেন দিনে দিনে তারা বাণিজ্যিক পর্যায়ে টমেটোর চাষাবাদ শুরু করেছেন। এতে কৃষকরা হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। টমেটো চাষাবাদ করে এখন পর্যন্ত কোনো কৃষক লোকসানে পড়েনি বরং তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। সীতাকুণ্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় টমেটোর পাইকারী ক্রেতারা ক্ষেতের টমেটো চুক্তি হিসেবে কিনে পিক-আপ ভ্যান, ছোট ও বড় ট্রাকসহ বিভিন্ন বাহনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

চাষীরা জানান, টমেটো সাধারণত শীত কালীন ফসল। আগে তারা শীতকালে দেশী জাতের টমেটো চাষ করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তারা গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ করছেন। টমেটো একটি সুস্বাদু সবজি হওয়ায় সীতাকুণ্ডের টমেটোর কদর রয়েছে সারা দেশে।

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন উপ- কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সীতাকুণ্ডে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়। চলতি বছর সীতাকুণ্ডে টমেটোর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩২০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে। উপজেলার উঁচু ভূমির মাটি আগাম জাতের টমেটো চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

বীজ ও বীজতলার মাটি শোধন:

টমেটো চাষে সফলতার জন্য কেনা বীজ বা ঘরে রাখা বীজ প্রথমে শোধন করে নিতে হবে (ভিটাভেক্স ছাত্রকানাশক দিয়ে)। সম্ভব হলে বীজতলার মাটিও শোধন করে নিলে ভাল হয়। বীজ তলার মাটি চাষ দিয়ে তাতে জৈব সার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে দু’সপ্তাহ ভাল করে ঢেকে রেখে দিলে সূর্যের তাপে মাটিতে থাকা অনেক জীবাণু মরে যায় ও বীজতলার মাটি শোধন হয়ে যায়। সময় না থাকলে বীজতলার মাটির উপরে ৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে আগুন দিলে সে তাপেও রোগ জীবাণু নষ্ট হয়।

চারা তৈরি:

সরাসরি জমিতে বীজ বুনেও টমেটো চাষ করা যায়। তবে দ্রুত ভাল ফলন পাওয়ার জন্য আলাদাভাবে চারা তৈরি করে সেই চারা মূল জমিতে লাগাতে হবে। এজন্য রোদযুক্ত উঁচু জায়গায় পরিস্কার করে ভালভাবে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। চাষের পর মাটি সমতল করে ১ মিটার চওড়া করে বেড বানাতে হবে। বেড খুব বেশি লম্বা না করে ৩-৫ মিটার করা ভাল। এতে পরিচর্যার সুবিধে হয়। ছিটিয়ে বীজতলায় বীজবপন করা যায়। ছিটিয়ে বপনের জন্য সাধারণত: প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ লাগে। বীজ থেকে চারা গজাতে ৬-১৪ দিন লাগে। শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য বীজ বুনতে হবে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। আগাম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হবে।

জমি তৈরি:

জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হয়। গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ২৩০ সেন্টিমিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে ২টি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হয়।

চারা রোপণের দূরত্ব:

প্রতিটি বেডে ২ সারি করে ৬০x৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।

রোপণ সময়:

শীতকালীন টমেটোর জন্য মধ্য কার্তিক থেকে মাঘের ১ম সপ্তাহ (নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে আগাম চাষের জন্য রোপণ সময় এগিয়ে আনতে হবে। আগাম চাষের জন্য ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং নাবি চাষের ফাল্গুণ মাসে এবং গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হবে।

সারের পরিমাণ:

টমেটো চাষের জন্য প্রতি শতকে ইউরিয়া ২.০-২.৪ কেজি, টিএসপি ১.৬-২.০ কেজি, এমওপি ০.৮-১.২ কেজি ও গোবর সার ৩০-৪৫ কেজি দিতে হয়। অর্ধেক গোবর সার ও সবটুকু টিএসপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট গোবর চারা লাগানোর পূর্বে  গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সমান দুই কিস্তিতে পার্শ্বকুশী ছাঁটাই এর পর চারা লাগানোর ৩য় সপ্তাহে ও ৫ম সপ্তাহে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হয়।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:

মরা পাতা ছাঁটাইসহ  ‘অ’ আকৃতি বাঁশের খুটি টমেটো গাছের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি কাজ। এ ছাড়া প্রয়োজনে সেচ দেয়াও যেতে পারে। প্রথম ফুলের গোছার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্বকুশি ছাঁটাই করতে হবে।

রোগবালাই:

টমেটোর চারা ঢলে পড়া রোগ: যে কোন বয়সের গাছই ক্ষেতে গেলে অনেক সময় ঝিমিয়ে ঢলে যেতে দেখা যায়। ব্যাক্টেরিয়ার কারণে এমন হলে হঠাৎ করে চারা ঢলে পড়ে। আক্রান্ত  গাছের ডাল কেটে পানিতে রাখলে ব্যাকটেরিয়ার সাদা কষের মত তরল বেরিয়ে আসে। পক্ষান্তরে ছত্রাক জীবাণু দ্বারা গাছ আক্রান্ত  হলে প্রথমে গাছের অংশ বিশেষ এবং কয়েকদিন পর সম্পূর্ণ গাছ ঢলে পড়ে। আক্রান্ত  কান্ডের ভিতরের অংশ বাদামী রং ধারণ করে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় মাটি যদি ভেজা থাকে তাহলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রোগাক্রান্ত  গাছ ও সেচের পানির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু বিস্তার লাভ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা:  রোগ মুক্ত চারা উৎপাদন ও রোপণ করতে হবে। বীজ তলায় বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ পূর্বে ৩-৫ টন/হেক্টর হারে মুরগির পচা বিষ্ঠা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া। মূল জমিতেও এভাবে মুরগির বিষ্ঠা  দেয়া যেতে পারে। ২৫০-৩০০ কেজি/হে: হারে সরিষা বা নিম খৈল এভাবে প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়। জমি আগাছামুক্ত রাখা। ঢলে পড়া চারা ক্ষেতে দেখা মাত্রই তুলে তা ধ্বংস করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ও পরিমিত ইউরিয়া ব্যবহার করা। জমি সব সময় আর্দ্র বা ভিজা না রাখা এবং নিকাশের ব্যবস্থা রাখা।

টমেটো সংগ্রহ ও ফলন

ফসল সংগ্রহ ও ফলন:

জাত ও লাগানোর সময়ের উপর নির্ভর করে ২-৪ মাসের মধ্যেই ফসল তোলার সময় হয়। টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয়ই অবস্থায়ই তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন ২০-৪০ টন।

টমেটো প্রথম চাষ করা হয় আমেরিকা অঞ্চলে। খ্রিস্টের জন্মের ৫০০ বছর আগেই অ্যাজটেক ও অন্যান্য জাতির লোকজন টমেটোর চাষ শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফলিক এসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। বোল্ডস্কাই জানিয়েছে কেন আপনার খাদ্যতালিকায় টমেটো রাখা উচিত।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে:

টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন এবং ভিটামিন এ; যা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

হাড়ের জন্য:

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য টমেটোর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য ভালো এবং অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনার যদি হাড় দুর্বল থাকে, তবে অবশ্যই টমেটো খান। আর এর মধ্যে থাকা লাইকোপিন যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।

ক্যানসার রোধ করে:

টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- লাইকোপিন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।  ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটোর কারণে ডিএনএ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

প্রদাহ দূর করে:

প্রদাহের একটি কারণ টিএনএফ-আলফা। টমেটোর কারণে শরীরে টিএনএফ-আলফার মাত্রা কমিয়ে রাখে। এতে শরীরে প্রদাহ কমে। কাজেই টমেটোর জুস পান করে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর চোখ ও ত্বক:

স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং চোখের জন্য টমেটো বেশ উপকারী। টমেটোর মধ্যে থাকা ভিটামিন এ- চোখ, ত্বক এবং হাড়কে সুস্থ রাখে। কুচি করে কাটা এক কাপ কাঁচা টমেটো প্রতিদিন খেলে দেহে ভিটামিন এ-র অর্ধেক চাহিদা পূরণ হয়।

ডায়াবেটিস:

ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় টমেটো দেহের শর্করার মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি। যেটা শরীরের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। অসুস্থ শরীর থেকে আরোগ্য পেতে টমেটো খেতে পারেন, এটা রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের জন্য:

ভিটামিন সি ত্বকে কলাজেন তৈরিতে কাজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক রক্ষায় সাহায্য করে।

রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে:

ব্লাড ক্লোট বা রক্ত জমাট বাঁধা মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় রক্তের সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণও হতে পারে। টমেটো এই ক্লোট প্রতিরোধে সাহায্য করে।

স্ট্রোক প্রতিরোধে:

টমেটো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। যখন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, তখন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি বংশে এই ধরনের রোগের প্রবণতা থাকে, তবে টমেটো খান।