উচ্চমূল্যের আলুবোখারা চাষ পদ্ধতি

0
13956
উচ্চমূল্যের আলুবোখারা চাষ পদ্ধতি

আলুবোখারা একটি উচ্চমূল্যের অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল। অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক, উচ্চপুষ্টিমান, সুগন্ধিযুক্ত এবং ভেষজ গুণের কারণে এটি বেশ সমাদৃত। এর পাতা এবং পাকা ফল মসলা হিসেবে ব্যবহারে খাবারে গন্ধ ও স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের দেশের আবহাওয়া এবং মাটি আলুবোখারা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বারি আলু বোখারা-১ জাতটি উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। সঠিক পদ্ধতিতে আলুবোখারা চাষ করলে এর ফলন দিয়ে আমাদের অভ্যন্তরিণ চাহিদা মিটানো সম্ভব।

এতদিন আমরা জানতাম যে এই ফসলটি আমাদের দেশে হয় না। কিন্তু এখন এই ফসলটা আমাদের দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। মূলত ২ ধরনের আলুবোখারা আছে। টেপারেট টাইপ জাপানী এবং ইউরোপীয়ান। ইউরোপীয়ান টাইপটা আমাদের দেশে ভালো হচ্ছে। এ গাছটি আকারে ছোট ছোট হয় এবং প্রচুর ফলন ধরে। রোগব্যাধি কম এবং ফলন বেশি হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কর্তৃক বারি-১ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

আলুবোখারা চাষ পদ্ধতি

 

আলুবোখারা গাছ বৈশাখ-আশ্বিন মাস পর্যন্ত রোপন করা যায়। অন্যান্য গাছের মতই স্বাভাবিক নিয়মে এ গাছ লাগানো যায়। এ গাছটি যেহেতু আকারে ছোট হয় এজন্য তা একটু ঘন করে লাগাতে হয়। প্রতি শতাংশে ৪ টি করে গাছ লাগাতে হয়। ফেব্রুয়ারি (মাঘ) মাসের শেষ দিকে ফুল আসে এবং জুন (আষাঢ়) মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। কলমের গাছে ১.৫ বছরে ফুল এবং ফল পাওয়া যায়। কিন্তু বীজ থেকে উৎপাদিত গাছের থেকে ফল পেতে সময় লাগে ৬/৭ বছর। ফল দেওয়া শুরু হলে ৮/৯ বছর পূর্ণমাত্রায় ফল দেয়। এই গাছ ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে।

বিদেশ থেকে আমদানী করে সাধারণত আমাদের দেশের চাহিদা মেটানো হয়। আলুবোখারা গাছে ভালোভাবে পাকলে গাঢ় লাল বা হালকা খয়েরি (জাম রং) রং ধারন করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়। হালকা রংয়ের সংগ্রহ করলে তা টক বা হালকা তেতো স্বাদের হয়। ১০-২০ বছর একটি গাছে ৩ হাজার পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। হেক্টর প্রতি ৭/১০ মেট্রেকটন ফল পাওয়া যায়। যা থেকে ৩৫/৪০ লক্ষ টাকা আয় করা যায়। বারি-১ আলু বোখারা জাতটিতে প্রচুর ফল ধরে। রোগ বালাই এবং পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় এটি চাষাবাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন বহুগুণ বাড়ানো যায়। বারি-১ আলুবোখারা জাতটির প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১৬ কেজি ফল পাওয়া যায়।

এ ফলটি গাছ থেকেই সম্পূর্ণ পাকিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় এ ফলটি ১৫-৩০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এ ফলটি ফ্রিজেও সংরক্ষণ করা যায়। তেলে হালকা করে ভেজে চিনির সিরায় সংরক্ষণ করা যায়।  এটা থেকে চাটনি, জ্যাম, জেলী এবং আচার তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ গাছটি প্রচুর পরিমানে হয়। গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রৌদ্রজ্জ্বল ও উচু স্থানে এ গাছটি রোপন করতে হয়।

কোলণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আলুবোখারা:

আলুবোখারা নামের ফলটি মসলা হিসেবে আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয়। এর মুখরোচক গুণের কথা জানা গেলেও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, তা আগে জানা যায়নি। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে হিন্দুস্থান টাইমস। গবেষকরা জানিয়েছেন, শুকনো আলুবোখারা ফলটি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সম্প্রতি মার্কিন গবেষকরা জানিয়েছেন এ তথ্য। গবেষণাদলের সদস্যরা ছিলেন টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার গবেষক।