বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বল্প পুঁজি নিয়ে নতুন খামার শুরু করার জন্য ছাগলের খামারই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য ছাগল পালনের বিকল্প নেই। আজকাল অনেক উচ্চ শিক্ষিত বেকার তরুণ তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ছাগল পালনকে বেছে নিচ্ছে। ছাগল পালনের পূর্বে ছাগলের জাত নির্বাচন অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে অনেক জাতের ছাগল পাওয়া যায়। বর্তমানে অধিক উৎপাদনক্ষম বিভিন্ন বিদেশী জাতের ছাগলও খামারে পালিত হচ্ছে।
ছাগলের জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার, বাজার চাহিদা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, খাবার চাহিদা ও স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালনের সুবিধা ইত্যাদি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এই সকল মানদণ্ডে বারবারি জাতের ছাগল হতে পারে আপনার জন্য আশাতীত সাফল্য অর্জনের মাধ্যম। যদিও এই ছাগলটি বাংলাদেশে বিদেশী জাত হিসেবে পরিচিত, ইতোমধ্যে এটি বিভিন্ন খামারে ব্যাপকভাবে পালন করা হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে গেলে অতি সহজে এবং অল্প শ্রম ও পুঁজিতে দ্রুত লাখপতি বা কোটিপতি হতে চাইলে বারবারি ছাগল পালন হতে পারে মূল হাতিয়ার। আমাদের আজকের আয়োজন এই বারবারি জাতের ছাগল নিয়ে।
বারবারি ছাগল পরিচিতি:
বারবারি জাতের ছাগল মাঝারি আকারের তবে দুনিয়াজুড়ে এরা নান্দনিক সৌন্দর্য্য, অধিক উৎপাদনশীলতা, সুস্বাদু মাংস ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত। মুখটা চিকন ও হরিণের মত মায়াবী, পা দুটোও হরিণের মত। বারবারি ছাগলের অতি দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং এক বছর (১২ মাস) থেকে ১৪ মাসের মধ্যে এই ছাগল দুইবার বাচ্চা প্রসব করে। এ জাতের ছাগী প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা জন্ম দেয়। এই ছাগলের আদি নিবাস আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিয়া। খামার করার জন্য বারবারি ছাগল অত্যন্ত উপযোগী। এই জাতের ছাগলের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা অনেক বেশি। এরা শুকনো খাবার খেয়ে বা দেশি ছাগলের মতই মাঠে চরে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। বারবারি ছাগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। ভারতে এই ছাগল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বৈশিষ্ট্য:
বারবারি ছাগলের আকার মাঝারি ধরনের। এরা দেখতে খুবই আকর্ষণীয় এবং সদা সতর্ক অবস্থায় থকে। এদের কান খাঁড়া এবং পাঁঠার মুখে ঘন দাঁড়ি থাকে। পাঁঠা ও পাঁঠির মোড়ানো শিং থাকে যেটা উপরে বা পিছনে খাঁড়া থাকে এবং দৈর্ঘ্যে মধ্যম আকারের হয়ে থাকে। বারবারি ছাগলের লোমের রঙয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র থাকে তবে সাধারণত সাদার উপর হালকা বাদামী গোলাকার বর্ণের হয়ে থাকে। প্রপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন প্রায় ৪০-৪৫ কেজি ও মেয়ে ছাগলের ওজন প্রায় ২৫-৩০ কেজি হয়ে থাকে।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
বারবারি ছাগল তার সুস্বাদু মাংস ও তিনটি বাচ্চা হওয়ার জন্য বিখ্যাত। এই জাতের ছাগল দ্রুত প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে এবং এই জাতের ছাগল সাধারণ রোগব্যাধী প্রতিরোধী। এই ছাগল বাধা অবস্থায় স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালন করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জাত। এরা বেশ ভালো পরিমাণে দুধ দেয় এবং এদের উর্বরতা অনেক বেশি। মাংস উৎপাদনের জন্য পুরুষ ছাগলকে খুব অল্প বয়সেই খোঁজা/খাসি করে দেওয়া হয়।
কেন বারবারি জাতের ছাগল পালন অধিক লাভজনক:
মাত্র দশটি বারবারি ডো/পাঁঠি ও একটি বাক/পাঁঠা নিয়ে খামার করে এক দেড় বছরেই অন্তত ১০ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করা যায় যা অন্যান্য জাতের ছাগল পালন করে অর্জন করা সম্ভব হয় না। সাধারণত বারবারি পাঁঠি এক বছরে দু’বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে ২টা বাচ্চা দেয় তবে অধিকাংশ সময় তিনটা করে বাচ্চা দেয়। সেই হিসেবে বছরে ১০টা পাঁঠি বছরে গড়ে ৫০টা বাচ্চা দেবে। যেমনটি আগেই উল্লেখ করেছি, বারবারি জাতের ছাগল বছরে ২৫-৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বর্তমান বাজারে ২০-৩০ কেজি একটি ছাগল প্রায় ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসেবে ৫০ টি ছাগলের বাজার মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।
তবে এটা শুধু মাংসের দাম অনুযায়ী হিসাব করলে। যেহেতু এই জাতটি বাংলাদেশে একেবারেই নতুন সেহেতু এটা এই মুহূর্তে মাংসের জন্য উৎপাদিত হচ্ছে না বরং জাত সম্প্রসারণের জন্য নতুন খামারীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে একেকটি প্রাপ্তবয়স্ক বারবারি পাঁঠা ৭০-৯০ হাজার টাকা ও একেকটি প্রাপ্তবয়স্ক বারবারি পাঁঠি প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে ৫০ টি বারবারি ছাগলের গড় বিক্রয়মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকার মত! এজন্যই বারবারি জাতের ছাগল খামারীদের সামনে এক অপার সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে এসেছে।
বারবারই ছাগল পালনের অন্যতম কারণসমূহ হল এই জাতের ছাগল উচ্চ মাত্রায় রোগ প্রতিরোধী এবং এর বাসস্থান খুব সহজেই নির্মাণ করা যায়। বছরে দুইবার ও প্রতিবারে তিনটি করে বাচ্চা হওয়ায় এই জাতের ছাগল খুব অল্প সময়েই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল পালে পরিণত হয়। এই ছাগলের মাংস রসনা বিলাসীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে এর উৎকৃষ্ট স্বাদের জন্য। তাছাড়া এর অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন চেহারা খামারের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে বহুগুন। খুব সহজেই এই ছাগল পালন করে আর্থিকভাবে বিশাল অঙ্কের মুনাফা অর্জন করা যায় যা অন্য কোনো খামার করে অর্জন করা সম্ভব নয়।
বিঃদ্রঃ বারবারি ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত পাবেন আমাদের পরবর্তী পর্বে। পাশে থাকুন।
লেখক: Molla Masum
নির্বাহী সম্পাদক
সফল খামারী
ইমেইল: writersden777@gmail.com
ai jater sagol khuthy pabo?
Please Call – 01730-474798
মন্তব্য: আমি ছাগলের খামার করতে উৎসাহী, প্রথমে ১টা তারপরে ২মাস পর আরো ১টা তারপরে আরো একটা এভাবে ছাগল নিয়ে পালতে চাই।
আমি কি তাহলে বড় খামার করতে পারবো.? পুজির জন্য না, জাস্ট অভিজ্ঞতার জন্য আমি একটা একটা করে ছাগল কিনে কিনে পালন করব।
আমার ধারনা যদি সঠিক হয় তাহলে প্লিজ আমাকে উৎসাহি করুন।
অবশ্যই, আপনি শুরু করেন, আপনি যদি চেষ্টা করেন আপনি সফল হবেন, প্রথমে অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেন পরবর্তীতে পুঁজি বাড়ান।
অবশ্যই, আপনি শুরু করেন, আপনি যদি চেষ্টা করেন আপনি সফল হবেন, প্রথমে অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করেন পরবর্তীতে পুঁজি বাড়ান।
Comments are closed.