টমেটো চাষ পদ্ধতি: খুব সহজেই উৎপাদন করা যায় রঙিন টমেটো

0
6834
টমেটো চাষ পদ্ধতি

রান্নায় অথবা সালাদে রসালো ফল অথবা সবজি- যাই বলি না কেন, টমেটোর জুড়ি নেই। টক-মিষ্টি এই ফলটি কাঁচা এবং পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়। তবে বাজার থেকে কিনে এনে এটা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, যা টমেটোর একটা বেশ বড় অসুবিধে। ফ্রিজে বেশিদিন রাখলেও পানসে হয়ে যায়। ডিপ ফ্রিজে পিউরি বা সস করে রেখে দিতে পারেন কিন্তু সবচাইতে ভালো বুদ্ধি হল আপনার বাড়ির  ফাঁকা জায়গায় অথবা বারান্দায় একটু জায়গা বের করে নিয়ে বস্তায় বা টবে টমেটো চাষ করা। আসুন জেনে নেই টমেটো চাষ পদ্ধতি: কিভাবে খুব সহজেই উৎপাদন করা যায় রঙিন টমেটো।

টমেটোর চারা রোপণের সময় ও প্রস্তুতি:

আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসের শেষ পর্যন্ত বস্তায় অথবা টবে টমেটো লাগাতে পারেন এই গাছ। টমেটো চাষ করতে হলে আপনার প্রথমেই যা প্রয়োজন পড়বে  তা হল বেশ বড়সড় একটা টব অথবা বস্তা। টমেটো গাছটা হয় বেশ ঝোঁপালো এবং এর মূলের প্রসার এবং বৃদ্ধির জন্য লাগে অনেকটা মাটি। এক থেকে দুই বর্গফুট টব অথবা পাঁচ গ্যালন পানি ধরে এমন পুরনো বালতি অথবা বড় প্লাস্টিকের বস্তা এর জন্য বেশ উপযুক্ত। এর পরে এই বস্তা বা টবের নিচের অংশে কিছু পরিমাণ খোয়া বিছিয়ে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে। এরপর বস্তার অথবা টবের এক তৃতীয়াংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে নিতে হবে।

চলুন টমেটো চাষ পদ্ধতি জেনে নেই:

টমেটো গাছ জন্মানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এর মাটির ক্ষেত্রে। পুরনো টবের মাটি বা বাইরে থেকে নিয়ে আসা নোংরা মাটি ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলোতে রোগজীবাণু থাকলে সহজেই আপনার গাছটি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। নার্সারিতে পাওয়া যেতে পারে বস্তা বা টবের জন্য প্রস্তুতকৃত বিশেষ মাটি এবং ভার্মিকম্পোস্ট। এগুলো দিয়ে তৈরি করতে পারেন টবের মাটি।

টমেটো চারা রোপণের পদ্ধতি

টমেটো চারা রোপণের পদ্ধতি ও যত্ন-

দুইভাবে টমেটো লাগাতে পারেন।

প্রথমত, আপনি নার্সারি থেকে চারা নিয়ে এসে আপনার বড় টবটিতে অথবা বস্তায় লাগিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বস্তা অথবা টবের মাটিকে নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে আগে থেকেই বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর যে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় আপনার চারাটি কিনে আনবেন সেটাকে সাবধানে মাটি থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন যেন এতে চারাটির মূলের কোনও ক্ষতি না হয়। এরপর টবের মাটিতে বেশ গভীর গর্ত করে তাতে চারাটি বসিয়ে দিন ও মাটি ভরে দিন কাণ্ডের চারপাশে। এই চারাটিতে বেশ করে পানি দিতে হবে কিন্তু লক্ষ্য রাখুন যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।

দ্বিতীয়ত, টমেটোর বীজ থেকে গাছ গজানো। বাড়ির বাগানে বেশি করে টমেটো গাছ লাগাতে চাইলে এটি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে আগে ভালো জাতের বীজ কিনে নিতে হবে। এরপর টবের আর্দ্র মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে বীজগুলোকে। অঙ্কুরোদ্গমের পর চারাগুলো বড় হতে শুরু করলে এগুলোকে বেশ আলো আসে এমন স্থানে রাখুন এবং কোনোভাবেই যেন এগুলোতে পানির অভাব না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখুন। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা রোদ খাওয়াতে হবে আপনার গাছগুলোকে, ৮ ঘণ্টা হলে ভালো হয়।

১. আপনার গাছ যখন বেড়ে ওঠা শুরু করবে তখন টবের প্রায় পুরোটাই মাটি দিয়ে ভরে দিন। এতে গাছ ভালো বাড়বে।
২. টমেটো গাছের যত্নে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ হলো টবে একটি খুঁটি পুঁতে তার সাথে গাছটিকে বেঁধে দেওয়া যাতে এর কাণ্ড বাঁকা না হয়ে যায়।
৩. এছাড়াও একে নেট দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন, তাতে পোকামাকড় কম হবে।
৪. গাছের বয়স ছয় সপ্তাহ হওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে একটু করে সার দিতে পারেন গাছের গোড়ায়।
৫. বেশি শীত এবং গরমের সময় মাটিকে রক্ষা করতে দিতে পারেন শুকনো পাতা বা বাড়ির শাকসবজির উচ্ছিষ্ট খোসা। এতে সারেরও কাজ হবে এবং তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব থেকে গাছের মূল রক্ষা পাবে।

এত রকমের যত্ন নিতে হয় বলে অনেকেই টমেটো লাগাতে চান না। অথচ এসবের পর গাছ ভরে যখন রঙ বেরঙের ফল আসবে, তখন কেমন খুশি লাগবে ভাবুন তো!