বাংলাদেশে তিতির পাখি পালনের সুযোগ, সম্ভাবনা ও গুরুত্ব !!!

0
6143
বাংলাদেশে তিতির পাখি পালনের সুযোগ, সম্ভাবনা ও গুরুত্ব
চিত্র: বাংলাদেশে তিতির পাখি পালন

ভূমিকা :

পোল্ট্রির মোট ১১টি প্রজাতির মধ্যে একটি হলো তিতির, যার ইংরেজী নাম Guinea fowl। শোভাবর্ধনকারী পাখি (Ornamental bird) হলেও

সুস্বাদু মাংস এবং ডিমের জন্য শত শত বৎসর যাবত তিতির পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হয়ে আসছে। আফ্রিকা মহাদেশে উৎপত্তি এ পাখিটি আগে বাংলাদেশের প্রধানত রাজশাহী,রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর,     টাঙ্গাইল অঞ্চলে বিশেষ ভাবে চোখে পড়ত। স্থানীয় জনগণ এই পাখিকে চীনা মুরগী নামে ডাকত এবং গ্রামীণ পরিবেশে হাঁস-মুরগীর সাথে পালন করত। বর্তমানে সৌখিন ব্যক্তিরা এদেরকে পালন করে থাকেলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে তিতির পালন ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে।

 

বাহ্যিক বৈচিত্র্যতার ভিত্তিতে তিতির পাখির শ্রেনীবিন্যাস :

পালকের রং-এর ভিত্তিতে এ পাখিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

ক) পার্ল ভ্যারাইট-এই ধরণের তিতির পাখি সাধারণত ধুসর পালকের অধিকারী। পালকে নিয়মিত ভাবে ফোটা ফোটা সাদা দাগ থাকে। দেখতে খুব আকর্ষনীয় হওয়ায় পালকগুলো সৌন্দর্য বর্ধনের উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

খ) লেভেনডার ভ্যারাইটি -পালকের বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে পার্ল ভ্যারাইটির সাথে মিল রয়েছে। ভিন্নতা শুধুমাত্র পালকের রং হালকাধুসর বর্ণের এবং তাতে নিয়মিতভাবে সাদা ফোটা ফোটা দাগ রয়েছে।

গ) সাদা ভ্যারাইটি -নামকরণ থেকে বুঝা যায় এটির পালক সাদা এবং এর পালকে কোন দাগ থাকে না। এই ভ্যারাইটির পাখির চামড়া পার্ল ভ্যারাইটির তুলনায় হালকা রং এর হয়।

তিতির ব্যবস্থাপনা :

(ক) ব্রুডিং-মুরগির বাচ্চার তুলনায় তিতিরের বাচ্চা ঠান্ডায় অধিক সংবেদনশীল। সেজন্য প্রথম সপ্তাহে উচ্চ ব্রুডিং তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রুডিং তাপমাত্রা ৩৭º সে. এবং চতুর্থ থেকে পঞ্চম সপ্তাহ পর্যন্ত ৩৬º সে.-এ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

(খ) বাসস্থান ব্যবস্থা-এদেরকে মুক্ত অবস্থায় (Free range), আধা-মুক্ত (Semi-intensive) এবং বন্ধ (Battery cages & deep litter) অবস্থায় পালন করা যায়। বয়স ভেদে প্রতিটি তিতিরের জন্য জায়গার পরিমাণ নিম্নরূপ:

তিতির ব্যবস্থাপনা
তিতির ব্যবস্থাপনা

(গ) খাদ্য এবং পানি-বাড়ন্ত তিতিরের সাপ্তাহিক খাদ্য এবং পানি গ্রহণের পরিমাণ নিচে তালিকা আকারে দেয়া হলো।

খাদ্য ও পানি গ্রহণ
চিত্র: খাদ্য ও পানি গ্রহণের তালিকা
খাদ্য গ্রহণের তালিকা
চিত্র: খাদ্য গ্রহণের তালিকা

(ঘ) খাদ্য প্রস্তুতকরণ

উৎকর্ষতার বৈশিষ্ট্য

দৈহিক ওজন, খাদ্য গ্রহণ এবং খাদ্য রূপান্তর দক্ষতার (F.C.R) ভিত্তিতে তিতিরের উৎকর্ষতার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

বিঃ দ্রঃ খাদ্যে শক্তি মাত্রা ৩০০০ কিলো ক্যালরি বিপাকীয় শক্তি কেজি এবং সহনীয় তাপমাত্রা ২০ºসে.।
বিঃ দ্রঃ খাদ্যে শক্তি মাত্রা ৩০০০ কিলো ক্যালরি বিপাকীয় শক্তি কেজি এবং সহনীয় তাপমাত্রা ২০ºসে.।

ডিম উৎপাদন ও বাচ্চা ফুটানো :

তুলনায় হালকা রং এর হয়।

ডিম উৎপাদন ও বাচ্চা ফুটানো
চিত্র: ডিম উৎপাদন ও বাচ্চা ফুটানো

বাংলাদেশে বিদ্যমান তিতির পাখির সাধারণ বৈশিষ্ট্য :

বাংলাদেশে যে তিতির পাখি পাওয়া যায় সেটি পার্ল ধরণের। এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলোঃ- রং ধুসর বর্ণের এবং পালকের উপর নিয়মিত ভাবে ফোটা ফোটা সাদা দাগ থাকে, ডিমের রং হালকা বাদামি থেকে ঘন বাদামি রং এর হয় ও ডিম এর গায়ে ছোট ছোট দাগ দেখা যায়, ডিম সাধারণত লাঠিম বা কনিকেল আকৃতির হয়, ডিমের ওজন ৩৮-৪৪ গ্রাম এর মধ্যে হয়ে থাকে,পুরুষ পাখির মাথার হেলমেট বা মুকুট একটু বেশী উঁচু স্ত্রী পাখির তুলনায়, পায়ের রং একটু কালচে ধরণের, একটি পূর্নাঙ্গ স্ত্রী পাখির ওজন ১৩০০-১৫০০ গ্রাম ও পুরুষ পাখির ওজন ১৬০০-১৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে, এ পাখির ডিম প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় পদ্ধতিতে ফোটানো যায়, ডিম ফুটতে ২৭-২৮ দিন সময় লাগে।

অন্যান্য পোল্ট্রি প্রজাতির তুলনায় তিতির পাখি পালনের সুবিধা সমুহ :

তিতির পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি।সংক্রামক বা পরজীবীঘটিত রোগ কোনটাই সহজে আক্রান্ত করতে পারেনা। মাইকোটক্সিন ও আফলাটক্সিনের প্রতি অধিক সহনশীল।এদেও খাদ্য খরচ তুলনামূলকভাবে কম। একটি পূর্ণবয়স্ক তিতির দৈনিক ১১৮-১২০ গ্রাম খাবার খায়। কচি ঘাস, পোকামাকড়, সবজি এদের প্রিয় খাদ্য। গ্রামীণ পরিবেশে এসবের অভাব নেই। সম্পূরক খাদ্যের পরিমান কম লাগে। এদের জন্য ভাল মানের ঘর লাগে না এবং খুব বেশী সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। ডিমের খোসা অত্যন্ত শক্ত, প্রায় ০.৪৮-০.৫০ মি.মি পুরু। বাজারে পরিবহন অথবা ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে। আলাদা কোন ভ্যাকসিন বা ঔষধ লাগে না। শারীরিক বৃদ্ধিও হার বেশ ভালো এবং মাংস অনেক সুস্বাদু ও পুষ্ঠিকর।ডিমের আকৃতি তুলনামূলক ছোট বলে বাচ্চারা এটি খেতে পছন্দ করে। তিতির পাখির ডিম ও মাংস খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য কোন ধর্মীয় বাধা নেই।একটি দেশী মুরগী যেখানে বৎসরে ৫০-৬০ টি ডিম দেয়, সেক্ষেত্রে একটি তিতির পাখি ১০০-১২০ টি ডিম দেয়। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

 বাংলাদেশে তিতির পাখি পালনের সম্ভাবনা :

সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে বলা যায় এ পাখির সংখ্যা ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে জীববৈচিত্র্যের বিবেচনায় অদূর ভবিষ্যতে এ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে হুমকির সম্মুক্ষীন হতে পারে। পোল্ট্রি ফার্মে কৃত্রিম উপায়ে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব (হ্যাচাবিলিটির ৬৫%)। কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চার লালন পালন এবং পরবর্তীতে বাড়ন্ত বাচ্চা সম্পূর্ন আবদ্ধ ঘরে তা পালন করা যায়। বাচ্চা বয়সে ব্রয়লার স্টারটার খাদ্য খাওয়ানো যায়। তিতির পাখির আমিষের চাহিদা বেশি বলে সিনথেটিক এমাইনো এসিড ও পরবর্তীতে বাড়ন্ত বয়সে লেয়ার খাদ্য খাওয়ানো যায়। বিভিন্ন দেশের গবেষণা থেকে দেখা গেছে তিতির পাখি সাধারণত ৬-৭ মাস বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পোল্ট্রি ফার্মে তিতির পাখি ২০ সপ্তাহ বয়সে ডিম দেয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া তিতির পাখির জন্য উপযুক্ত বলে সম্ভবত আগে ডিম পাড়া শুরু করে। বাংলাদেশে বিদ্যমান পার্লজাতীয় তিতির পাখি প্রায় সারাবছর বিরতি দিয়ে ডিম পাড়ে। তবে বসন্তকালে ডিম পাড়ার হার বেশি। বাংলাদেশে গ্রামীণ পরিবেশে দেশী হাঁস মুরগীর সাথে তিতির পাখি পালনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

তিতির পালনে প্রতিবন্ধকতা :

বাংলাদেশ তিতির পাখি হ্রাস পাওয়ার পেছনে নানা কারণ লক্ষ্য করা যায়। পোল্ট্রির প্রজাতি হিসেবে হাঁস-মুরগি বা কোয়েল কবুতরের চেয়ে তাদের রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বংশগত বৈশিষ্ট্য, যার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না। যেমন অল্প বয়সে অধিক বাচ্চা মৃত্যুর হার। বলা হয়ে থাকে তিতির পাখি “আদর্শ মা”নয়। প্রাকৃতিকভাবে উমে আসা মা তিতির পাখির পেটের নিচে তা দিয়ে ডিম ফোটানোর ক্ষেত্রে একদিকে যেমন ডিমে তা দেয়ার সময় তারা খুব যত্নশীল নয়, অন্যদিকে পেটের নীচে দেয়া ৮-১০টি ডিমের মধ্যে প্রথম ১-২টি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথে তিতির অবশিষ্ট ডিম ফেলে চলে যায়। সেগুলি থেকে আর বেশি বাচ্চা ফোটে না। সাধারণত তিতির পাখি একটু বোকা প্রকৃতির। স্বভাবগতভাবে এরা ঝোপঝাড়, জঙ্গল পছন্দ হওয়ায় ছোট বাচ্চা নিয়ে সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময় প্রায়শই শিয়াল, কুকুর, চিল বা বাজ পাখি সহ নানা ধরণের শিকারীর কবলে পড়ে বাচ্চা মারা যায়। মা তিতির বাচ্চাদের রক্ষা করতে পারে না। বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার সাথে সাথে Leg paralysis বা পা খোঁড়া হয়ে যাওয়া রোগের প্রবণতা প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে বাচ্চা পালনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাচ্চাগুলো লিটারের নোংরা খায়। ফলে পরিপাকতন্ত্রের নানান সমস্যা দেখা দেয়।বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রচুর আমিষ বিশেষ করে লাইসিন এবং সালফারযুক্ত এমাইনো এসিডের প্রয়োজন হয় যা সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।খাঁচা পদ্ধতিতে (Battery/Cage) পালনের সময় এরা উড়াউড়ি করে। ফলে এদের হেলমেট ও পা-এ ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

তিতির পালনে সমস্যা সমাধানের উপায় :

মেঝেতে তিতির পালনের সময় পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে।খাঁচার তুলনায় মেঝেতে পালন বেশি লাভজনক ও সুবিধাজনক। তিতিরের ডিম দেশীয় মুরগির সাহায্যে ফুটানো যায়।আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্যে অতিরিক্ত আমিষ সরবরাহ করতে হবে। খাদ্যের সাথে নিয়মিত ভিটামিন এবং মিনের‌্যালস্ দিতে হবে।

রোগ লক্ষণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা :

তিতিরের বিভিন্ন রোগ, এদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিচে বর্ণিত হলো।

চিত্র: রোগ লক্ষণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা
চিত্র: রোগ লক্ষণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা

 বাজারজাতকরণ ও উপকারিতা :

তিতির ৭-৮ মাস বয়সে বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়। এদের মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। বিলাসবহুল হোটেল, রেস্তোরা এবং বড় বড় ভোজসভায় এদের মাংসের যথেষ্ট সমাদর আছে। এদের নরম পালক শীতকালীন পোষাক ও বিছানা প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে গণ্য হতে পারে। শুধু তাই নয় এটি পালন করে দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে।

দেশি মুরগির চেয়েও লাভজনক তিতির পালন

অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস

গবেষক ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি)

 আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে তিতির পাখি চায়না মুরগি নামে পরিচিত। আফ্রিকান এই পাখিটি ইংরেজদের হাত ধরে ইউরোপ থেকে বৃটিশ উপনিবেশের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে। বর্তমানে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে আশঙ্কাহীন বলে ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে এরা প্রায় বিপন্ন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তিতির অত্যধিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সমপন্ন পাখি। এছাড়া এর বাজার মূল্য দেশি হাঁস-মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। তাই এটি লালন-পালন করা অন্যান্য দেশি মুরগির চেয়ে লাভজনক। তিতির পাখি পালন দারিদ্র বিমোচনে যেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে তেমনি বিপন্নপ্রায় এই প্রজাতিটির সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস। অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, গত ৩ দশক আগেও এই তিতির পাখি দেশের গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির সাথে চলাফেরা করতে দেখা যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই এই পাখি আর দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে এই পাখি গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে না থেকে ঢাকার কাটাবনে খাঁচায় দেখা যাচ্ছে। আর সেই খাঁচার প্রতিটি তিতির পাখি ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু একটি গৃহপালিত পাখি কেন খাঁচায় বন্দী থাকবে। পাখিটি যেনো আবার কাটাবনের সেই খাঁচা থেকে আবার কৃষকের ঘরে ঘরে পালিত হতে পারে সেই জন্য তিনি নতুন করে ২০১০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি খামারে তিতির পাখি পালন, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের উদ্যোগে বিপন্নপ্রায় এই তিতির পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস। টানা ছয় বছর ধরে অধ্যাপক ড. সুবাস ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন ও তা পালনের সব ধাপ এই গবেষণা খামারে সম্পন্ন করেছেন। দেশের সর্বত্র এই পাখি ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে অনেককেই তিনি এই পাখি বিতরণ করেছেন। এখন উদ্যোক্তাদের মাঝে তিতির পালনকে নতুন করে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে তিতির পালনের জন্য খামারিরা উৎসাহিত হচ্ছেন। তিতির পালন সম্পর্কে অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, দেশি মুরগির মতই এদের লালন-পালন করা যায়। তিতির পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি। সংক্রমণ বা পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারেনা। আলাদা কোন ভ্যাকসিন বা ঔষধ দেয়ারও প্রয়োজন হয় না। এমনকি এদের সমপূরক খাদ্যের চাহিদাও কম। প্রতিকূল পরিবেশ এরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তিতিরের মাংস উৎপাদন সম্পর্কে অধ্যাপক সুবাস বলেন, দেশি মুরগি যেখানে ছয় মাসে সর্বোচ্চ এক কেজি ওজনের হয় সেখানে তিতির পাখি দেড় কেজি বা তার  বেশিও হতে পারে। একটি তিতির পাখি বছরে প্রায় ১০০-১২০টি ডিম দেয়। বাণিজ্যিক পোল্ট্রির দাপটে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে তিতির পাখি পালন। কিন্তু ডিম আর মাংসের উৎপাদনে পোল্ট্রির চেয়েও তিতির পাখি পালনে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস। বেশিও হয়ে থাকে। আবার একটি দেশি মুরগি বছরে ৫০-৬০ টা ডিম দেয় ।

উপসংহার:

তিতির পালন বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। তাই এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তিতির পাখি পালনের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। সেটি সম্ভব হলে বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে তিতির পাখি দেশী হাঁস মুরগীর সম্পূরক হিসাবে পালন করে মাংস ও ডিমের চাহিদা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। অন্যদিকে জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে এটি তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক তিতির পালন করে দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এর ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।