বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফল

0
4827
বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফল

বাংলাদেশে তেমন ড্রাগন ফল প্রচলিত নয়। এই ফলটি মূলত ক্যাকটাস গোত্রীয়। আমেরিকার এই ফলটি তবে প্রায় সব দেশেই সামদৃত।  বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের চাষ হয়ে থাকে। বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফল। বর্তমানে বাংলাদেশের রংপুর, রাজবাড়ি , নাটোর, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষ করা হচ্ছে। ঢাকার কিছু অভিজাত হোটেল এই ফল প্রতি কেজি তিনশ থেকে চারশ টাকায় বিক্রি করছে। ফলটি দেখতে খুব আকর্ষনীয় ও এর কার্যকারিতা অনেক। এ ফলটিকে টিহায়া, পিটাইয়া ইত্যাদিও নামেও ডাকা হয়। ড্র্রগন ফল গাছ শুধুমাত্র রাতে ফুল দিয়ে থাকে। এশিয়া মহাদেশে এ ফলের অনেক জনপ্রিয়তা আছে। ড্রাগন ফলটি দেখতেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউ জার্ম প্লাজম সেন্টারে ২০০৭ সালে অধ্যাপক ড. এমএ রহিম বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের প্রবর্তন করেন। তিনি এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। সেসব গাছ এখন দিব্যি ফল দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ ফলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এই সফলতার ওপর ভিত্তি করেই জার্ম প্লাজম সেন্টারের পক্ষ থেকে নাটোর, রাজবাড়ী, রাঙ্গামাটিসহ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

২০০৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বড়াইগ্রামে বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ উদ্বোধন করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। ড্রাগন ফুল রাতে ফোটে নাইট কুইন ফুলের মতোই। ফুলের আকার লম্বাটে হয়। ড্রাগন  ফলের রং সাদা ও হলুদ হয়ে থাকে। ফুল মৌমাছি ও পোকামাকড় পরাগায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ফুল থেকে ডিম্বাকৃতি ফল উৎপন্ন হয়। ফল হালকা মিষ্টি ও ক্যালরি কম যুক্ত হয়। এতে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ থাকে। একটি গাছ থেকে বছরে ৬০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম হওয়ায় এ ফল চাষে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। গাছগুলো প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ খাবার বায়ুমন্ডল থেকেই সংগ্রহ করতে পারে এবং বাকি খাবার সংগ্রহ করে জৈব সার থেকে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এই ফল চাষের ওপর জোর দিচ্ছে।

বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফল
চিত্র: বাড়ির ছাদে ড্রাগন ফল চাষ

বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিংয়ের চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১ বছর থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যত্ন নিতে পারলে একরপ্রতি ৫ থেকে ৬ টন ফলন হতে পারে। কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকা হলে, ১ বছরে যার বাজর মূল্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা হতে পারে। খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বাদ দিলে নিট লাভ হবে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।  বর্তমানে ভিয়েতনামে এই ফল বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, ইসরাইল, শ্রীলঙ্কাতেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজে করা যায়।

ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো  জুন-জুলাই মাস। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। শীতকালে এই গাছ ফুল দেয়া বন্ধ করে দেয়। ড্রাগন ফল গাছে পাকা অবস্থায় ৫ থেকে ৭ দিন রেখে দেয়া যায়। আর গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর রাখা যায় প্রায় এক মাস।
প্রায় সব ধরনের উঁচু মাটিতেই ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়।

ড্রাগন ফলের গুরুত্ব:
  • ড্রাগন ফলের আঁশ শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
  • ড্রাগন ফলের প্রোটিন শরীরের বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।
  • ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও সুস্থ দাঁত তৈরি করতে সহায়তা করে।
  • এ ফলে আঁশ বেশি থাকায় হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ভিটামিন-বি-১ কার্বহাইড্রেট বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে।
  • ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে।
  • ভিটামিন সি শরীরের কাটা, ভাঙা জোড়া লাগাতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন বি-২ শরীরে ক্ষুধা তৃষ্ণা, যৌন বাসনা, প্রভৃতি মিটানোর আকাঙক্ষা উন্নয়ন ও পূরণে সাহায্য করে।
  • ফসফরাস বেশি থাকায় কোষ কলা গঠনে সাহায্য করে।
  • ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় সুস্থ চোখের উন্নয়ন করে।