সজিনা বহুবিধ রোগের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে থাকে। খাদ্যমান ছাড়াও সজিনার ওষুধি গুণ অনেক। সজিনা ৩০০ প্রকার ব্যাধির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় প্রায় সবগুলো অ্যামাইনো অ্যাসিড সজিনা পাতায় বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা একে “পুষ্টির ডিনামাইট ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রধান ঔষধি রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে–বিটা সিটোস্টেরোল, অ্যাক্যালয়েডস-মোরিনাজিন। আর ফুলে আছে জীবানুনাশক টিরিগোজপারমিন। এরমধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক অ্যাসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। সজিনার মূল, ছাল, ফল, ফুল, বীজ সবার মধ্যেই আছে ঔষধি গুণ। এটি একটি অতিপ্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী উদ্ভিদ। সজিনায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ভিটামিন।
সজিনার উপকারিতা বা গুণাগুণ নিন্মরুপ:
- সজিনা ফুল শাকের মতো রান্না করে বসন্তকালে খেলে বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ হয়।
- সজিনা পাতা শাকের মতো রান্না করে আহারের সময় অল্প পরিমাণে খেলে বল বৃদ্ধি পায় ও ক্ষুধা বাড়ে।
- অর্শে যন্ত্রনা আছে অথচ রক্ত পড়ে না, এক্ষেত্রে নিন্মাঙ্গে তিল তৈল লাগিয়ে পাতা সিদ্ধ ক্বাথ দ্বারা সিক্ত করলে ব্যাথা কমে যায়।
- এক্ষত্রে পাতা সিদ্ধ করে পানি সেচন দিলে চোখ ব্যথা ও পিটুনি পড়া বন্ধ হয়।
- সজিনার মূলের ছালের প্রলেপ দিলে দাঁদে উপকার পাওয়া যায়। তবে এটি প্রত্যহ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এছাড়াও এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।
- বাতজ্বর চিকিৎসায় সজিনা ব্যবহৃত হয়।
- পোকামাকড়ের কামড়ে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে এর পাতার রস।
- কুষ্ঠ রোগে বীজের তেল অথবা বীজের তেলের অভাবে বীজ বেটে প্রলেপ দিলে উপকার হয়।
- সজিনা মূল ও বীজ সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
- সজিনা বীজের তেল আমাদের দেশে তেমন পাওয়া যায় না। একে‘বেন অয়েল’ বলে। এটি ঘড়ি মেরামতের কাজে লাগে।
- সজনে ডাঁটার মতো এর পাতারও রয়েছে যথেষ্ট গুণ। সজনে পাতা শাক হিসেবে, ভর্তা করেও খাওয়া যায়। এতে মুখের রুচি বাড়ে।
- সজনে পাতার রস খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট সারে। তাছাড়া পাতাকে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করে তা থেকে যেই ঘন রস পাওয়া যায় হিং (এক ধরনের বৃক্ষ বিশেষ) ও শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায়।
- সজনে পাতা বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায় ও ব্যাথার উপশম হয়। ফোড়ায় সজিনার আঠার প্রলেপ দিলেও সেরে যায়।
- সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকি দূর হয়।
- সজনে ডাঁটা খাওয়া উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সজনে দেহের কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসায় সজনের পাতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সজনের পাতার (কচি নয়) রস প্রতিদিন নিয়ম করে ৪-৬ চা চামচ খেলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। তবে যাদের প্রস্রাবে বা রক্তে গ্লুকোজ আছে তাদের খাওয়া যাবেনা।
- টিউমার যখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তখন সজনের পাতা এই টিউমার নিরাময় করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার ধরা পরলে তাতে সজনে পাতা বেটে প্রলেপের মতো ব্যবহার করলে টিউমারের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্যথা বা আঘাত পেলে দেহের কোনো অংশ ফুলে উঠলে একই উপায়ে তা নিরাময় করা সম্ভব।
- বাতের ব্যথা উপশমে সজনে গাছের ছাল বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতি বেশ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে গাছের ছাল তুলে তা বেটে রস চিপে নিয়ে এই রস নিয়মিত প্রতিদিন ৪-৬ চা চামচ খেলে বাতের ব্যথা প্রায় ৬৫% উপশম হয়।
- অনেক সময় দাঁতের মাড়ির সমস্যায় অনেকে ভুগে থাকেন। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া সমস্যায় ইদানীং অনেককে পড়তে দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে সজনে পাতা। সজনে পাতা ১/২ মগ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালো করে প্রতিদিন কুলকুচা করতে হবে। এতে মাড়ির সকল সমস্যার সমাধান হয়।
- হেঁচকি ওঠা যে কতো কষ্টের তা যারা ভুক্তভোগী তারা ঠিকই জানেন। একবার হেঁচকি উঠা শুরু করলে তা বন্ধ হতে চায় না সহজে। কিন্তু সজনে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে বেশ সহজে। সজনে পাতার রস ৯/১০ ফোঁটা আধ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে ২-৩ বার এক নিঃশ্বাসে পান করে ফেলুন। দেখবেন হেঁচকি ওঠা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
- শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং ফোলা সেরে যায়।
- শেকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা ভাল হয়ে যায়।
- সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করিলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।
- সজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মুত্রপাথরী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয়।
- সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন,হলুদ, লবণ ও গোল মরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়।
- পাতার শাক খেলে জ্বর ও যন্ত্রণাদায়ক সর্দি আরোগ্য হয়।
- সজিনা গর্ভপাত কারক। সজিনার ছাল গর্ভাশয়ের মুখে প্রবেশ করালে গর্ভাশয়ের মুখ প্রসারিত হয়ে যায় এবং গর্ভপাত ঘটে।
- মানুষের শরীরে চিনির মাত্রা সমান রাখে ও ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়।
- হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শরীরে পুষ্টি ও শক্তি জোগায়।
- সজিনা লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত রাখে।
- শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- মায়ের দুধের পরিমাণ বাড়ায়।
- ব্যাকটেরিয়া বিরোধী সজিনার পেস্ট ত্বকের জন্য উপকারী।
- পুরুষের যৌনশক্তি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী করে।
- মেয়েদের বিলুপ্ত যৌন বাসনাকে উজ্জীবিত ও দীর্ঘায়িত করে।
- কৃমিনাশক হিসেবে সজিনা ব্যবহার করা যায়।
- সবুজ পাতায় প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে। ১০০ গ্রাম সবুজ পাতায় ৭৫৬৪ আইইউ ভিটামিন এ বিদ্যমান। ভিটামিন এ ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়। যা ত্বক সুস্থ রাখে, চোখের জ্যোতি ভাল রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- সজিনার পড এবং পাতা ভিটামিন-সি এর ভাল উৎস। ১০০ গ্রাম পড এ ১৪৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-সি রয়েছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও শরীর থেকে ক্ষতিকর অক্সিজেন মুক্ত ফ্রি-রেডিকেল দূর করে।
- সবুজ পাতা এবং পডে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এতে রয়েছে ফোলেট, ভিটামিন বি-৬, থায়ামিন, রিভোফ্লাভিন, প্যানটোথেনিক এসিড এবং নিয়াসিন। এগুলো শর্করা, প্রোটিন এবং চর্বি হজমে সহায়তা করে।
- এছাড়াও এর সবুজ পাতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম, লৌহ, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, সেলেনিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়। লৌহ রক্তস্বল্পতা দূর করে, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনের জন্য প্রয়োজন। নতুন চুল গজাতে, শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এবং ত্বকের জন্য প্রয়োজন জিংক।
- ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও আছে।
- গরমকালের সাধারণ রোগবালাই থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড সজিনাতে পাওয়া যায়।
- শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- মায়ের বুকের দুধের পরিমান বৃদ্ধি করে।
সতর্কতা:
- সজিনা গাছের মূলে স্পাইরোসিন নাম অ্যালকালয়েড রয়েছে। যা নিউরু-প্যারালাইটিক টক্সিন হিসেবে কাজ করে!
- পুকুরে কখনো সজিনা গাছের ডাল, বাকল, মূল ইত্যাদি ফেলবেন না। পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মারা যেতে পারে!
- যদি প্রচুর পরিমাণ সবুজ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয় তবে পেটে গ্যাস জমে পেট ফাঁপা হতে পারে। এটির ল্যাক্সাটিভ গুণ থাকায় পেট খারাপ বা ডায়রিয়াও হতে পারে।